Monday, August 14, 2017

বন্যায় ভাসছে উত্তরাঞ্চল, শিশুসহ মৃত্যু পাঁচ

দিনাজপুর, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে বন্যায় শিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিখোঁজ বেশ কয়েকজন। দিনাজপুরে বন্যার পানির স্রোতে ভেসে আজ সোমবার একজন মারা গেছেন। এ নিয়ে তিন দিনে এই জেলায় বন্যায় ১৪ জনের মৃত্যু হলো। লালমনিরহাটে গতকাল রোববার পানি পার হয়ে আশ্রয়ের খোঁজে যাওয়ার সময় সাড়ে তিন বছরের এক শিশু মারা গেছে। আরেক শিশুসহ তিনজন নিখোঁজ। কুড়িগ্রামে তিনজন মারা গেছেন।
এদিকে দিনাজপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, বগুড়ায় বিভিন্ন নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। দিনাজপুরে নয়টি বাঁধ ভেঙে শহরের ভেতরে পানি ঢুকে গেছে।
দিনাজপুর: দিনাজপুর সদর উপজেলায় বন্যার পানির স্রোতে ভেসে আজ সকালে একজন মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক খায়রুল আলম। তাঁর পরিচয় জানা যায়নি। গত দুই দিনে দিনাজপুর সদর, খানসামা, বিরল, বীরগঞ্জ ও কাহারোল উপজেলায় বন্যায় ১৩ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে তিন দিনে ১৪ জনের মৃত্যু হলো।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় নয়টি বাঁধ ভেঙে গেছে। নদীতে পানি কমলেও এর ফলে শহরের বিভিন্ন এলাকায় পানি ঢুকেছে। প্লাবিত হয়েছে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি। দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপসহকারী কর্মকর্তা মো. সিদ্দিকুরজ্জামান জানান, গতকাল রোববার পুনর্ভবা নদীতে পানির উচ্চতা ছিল ৩৮ দশমিক ৩১ মিটার। আজ এই নদীতে পানির উচ্চতা ৩৮ দশমিক ২৮ মিটার। আত্রাই নদীতে পানির উচ্চতা গতকাল ছিল ৪০ দশমিক ১৫ মিটার। আজ কমে হয়েছে ৪০ দশমিক ১০ মিটার।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. মোখলেসার রহমান বলেন, বন্যার পানিতে দিনাজপুরের বিভিন্ন স্থানে রেললাইন ডুবে গেছে। এ জন্য দিনাজপুরের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ গতকাল থেকে বন্ধ রয়েছে।
লালমনিরহাট: গতকাল বেলা দুইটার দিকে সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের পূর্ববড়ুয়া গ্রামে রবিউল ইসলামের সাড়ে তিন বছরের ছেলে নাজিম, নাজিমের মা নাজমা বেগম (২২), রবিউলের বোনের স্বামী মোজাম্মেল হক (৪৫) ও মোজাম্মেলের সাত বছরের ছেলে আলী হোসেন বন্যার পানি পার হয়ে আশ্রয়ের খোঁজে যাচ্ছিল। একপর্যায়ে সবাই পানিতে তলিয়ে যায়। এক ঘণ্টা পর শিশু নাজিমের লাশ ভেসে ওঠে। বাকিরা নিখোঁজ রয়েছে।
লালমনিরহাট জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান জানান, গতকাল রাত সাড়ে নয়টার দিকে নাজিমের লাশ লালমনিরহাটে এনে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ সময় সঙ্গে তার বাবাও ছিলেন। ওই পরিবারের বাকি তিন সদস্য নিখোঁজ রয়েছে।
লালমনিরহাটের পাউবো বলছে, সকাল ছয়টার দিকে ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
লালমনিরহাট রেল বিভাগীয় সূত্র জানায়, বন্যার পানিতে লালমনিরহাট-বুড়িমারী রুটের ভোটমারী থেকে বুড়িমারী পর্যন্ত, কুড়িগ্রামের রমনা বাজার থেকে কুড়িগ্রাম পর্যন্ত, ঠাকুরগাঁও পঞ্চগড় রুট, লালমনিরহাট রেলস্টেশন থেকে তিস্তা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও ত্রাণ কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানান, বন্যায় তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে তাঁদের পরিচয় জানা যায়নি।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেবেন্দ্রনাথ জানান, ওই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যার্তদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
আজ সকালে ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩২ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ৬৮ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া ইউনিয়নে দুধকুমার নদের পানি ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুড়িগ্রামের কাঁঠালবাড়ি, রাজারহাটের কালুয়া ও ফুলবাড়ীর গোড়কমণ্ডল এলাকায় বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে সড়ক ভেঙে যাওয়ায় এবং পানি ওঠায় জেলার সঙ্গে এসব এলাকার সড়ক ও রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
জেলার নয় উপজেলার ৫৮ ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দী। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ৬০৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পানিতে ডুবে যাওয়ায় ৮৩টি কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা ও ত্রাণ তৎপরতা সচল রাখতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বগুড়া: জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা শাহারুল হোসেন মোহাম্মদ আবু হেনা আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল পর্যন্ত সারিয়াকান্দি উপজেলার নয়, সোনাতলা উপজেলার তিন এবং ধুনট উপজেলার দুটিসহ জেলার ১৪টি ইউনিয়ন প্লাবিত ছিল। গত রাতে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে যমুনা নদীতে ৩০ সেন্টিমিটার ও বাঙ্গালী নদীতে অস্বাভাবিক পানি বেড়েছে। এখনো পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা কত, সেই তথ্য সব উপজেলা থেকে এসে পৌঁছায়নি। আজ দুপুরের মধ্যে তা জানানো সম্ভব হবে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, যমুনায় পানি বেড়ে যাওয়ায় উপজেলার চন্দনবাইশা, কামালপুর, কুতুবপুর, বোহাইল, কর্ণিবাড়ি, চালুয়াবাড়ি, হাটশেরপুর, কাজলা, সারিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। শুধু সারিয়াকান্দি উপজেলাতেই পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা অর্ধলাখে ছাড়িয়ে যেতে পারে। স্রোতের তোড়ে চরাঞ্চলে নদী ভাঙনে চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের মানিকদাইর চর ও বহুলাডাঙ্গা চরের অর্ধশত পরিবার গৃহহারা হয়ে পড়েছে।
বগুড়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আমিন বলেন, ‘গত ৪৮ ঘণ্টায় যমুনা নদীর মথুরাপাড়া পয়েন্টে ৯৭ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে এখন বিপৎসীমার ৮৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনায় পানি যেভাবে ধেয়ে আসছে, তাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি এবং গত জুলাই মাসের বন্যার চেয়েও পরিস্থিতি দ্বিগুণ খারাপ হতে পারে।’

No comments:

Post a Comment